নিজের বলার মতো কিছু কথা আর কবিতা নিয়েই আমার জীবন। সব কথা বলা যায় না কবিতায়, কবিতাও সবার জন্য নয়। কিছু কথা বলতে হয় বলার ভাষায়। সেইসব বলা না বলা কথা আর কবিতা নিয়েই আমার জীবন-যাপন। এছাড়া জীবনের তাগিদে নানান কাজ করে আমার সময়গুলো কেটে যায় ভীষণ ব্যস্ততায়। বই পড়া, ভ্রমণ, লেখালেখি, ব্যবসা আমার পছন্দ বিষয়।

  • সমাজ ধ্বংসের আরেক ধাপ: পুরুষ পতিতা বা মেইল এস্কর্ট

    সমাজ ধ্বংসের আরেক ধাপ: পুরুষ পতিতা বা মেইল এস্কর্ট

    শিরোনাম দেখে অবাক হবার কিছু নাই। হ্যাঁ, এটা পুরুষরাও হতে পারে। পুরাতন ঐতিহাসিক বইগুলোতে এর কিছু খন্ডচিত্রও রয়েছে। এটা নতুন কিছু না৷ সচেতনতার জন্যই বিষয়টা সামনে আনা। অধুনা পশ্চিমা বিশ্বে এটা এখন নারীদের মতোই সাধারণ বিষয়। তবে এশিয়ায় এর প্রচলন নেই। তবে পশ্চাত্যের থেকে অন্য সবকিছু আমদানি হলেও এটা হবার নয় কেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নারীদের কাছে। এমনকি ঢাকার শহরেও এর পূর্ণ আভাস পাওয়া যাচ্ছে এখন।

    কয়েকশো মেইল এস্কর্ট‍‍ গ্রুপ রয়েছে এই ঢাকার শহরে। হ্যা, এই শহরের নারীদের এখন পুরুষ ভাড়া করার প্রয়োজন হয়। কারণ তারা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তারা প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলছে। তাদের চাহিদা যোগাতেই এখন পুরুষ পতিতার প্রয়োজন হয়৷ পতিতা শব্দটা নিয়ে বাংলাদেশের এককালের জনসমালোচিত লেখিকা খুব বিরোধীতা করেন। যেহেতু বাংলা কোন অভিধানে পতিতা শব্দের পুরুষবাচক কোন শব্দ নেই। এজন্য তিনি পতিতার পুরুষবাচক শব্দ পতিত আবিষ্কার করেন। এটাকে অভিধানভুক্ত করার জন্য বেশ জোরাজোরি করেন। এ বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলামও লেখেন। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তার এই বিরোধিতা কোন কাজে আসেনি।

    মেইল এস্কর্ট‍‍ নামে এরা বেশি পরিচিত। সরাসরি এর প্রতিশব্দ বাংলা ভাষায় নেই। তবে এর যথার্থ মর্ম উঠে আসে, পুরুষ পতিতা শব্দে। রাজধানী ঢাকাতেই এদের চাহিদা সীমাবদ্ধ। অন্যান্য বিভাগীয় শহরে আছে কি না সেটা জানা যায় না। এদের অধিকাংশই শিক্ষিত ছেলে। অর্থাভাবে পরিবার পড়াশোনার খরচ বহন করতে না পারায় তারা নিজেদের আয় নিজেরা করে নিতে এ পেশার দিকে ঝুঁকছে। কেউ আবার বেকারত্ব দূর করতে এ পেশা বেছে নিচ্ছে। এখানে সুদর্শন, সুঠামদেহী পুরুষদের চাহিদা বেশি। যারা নিয়মিত ক্লায়েন্ট পেতে নিজেদেরকে জিম আর স্ব্যাস্থকর খাবার খেয়ে ফিট রাখছেন।

    এমনটাই দেখা যায় বাংলাদেশের মেইল এস্কর্ট‍‍ দ্বারা পরিচালিত কিছু ওয়েবসাইটে। যেখানে পুরুষের দরদাম, লেনদেন ও শারিরীক অদ্যপান্ত বৃত্তান্ত দেওয়া আছে। অনলাইনেই এদেরকে খুঁজে নেন নারীরা। তবে শহরের আভিজাত্য এলাকার বিভিন্ন স্থানে এসব ছেলেদের দু’একজনকে দেখা যায়। তবে চেনার কোন উপায় নাই। যদি না কেউ ওই জগতের লোক হয়ে থাকেন বা তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত না জানেন। এরা তাদের সাংকেতিক চিহ্ন হিসেবে রুমাল ব্যবহার করে থাকে। সেটা দেখেই নারীরা খুঁজে নেন তাদেরকে নির্ধারিত পসন্দের পার্টনার।

    ও আরেকটা বিষয়—বাংলাদেশে মেইল স্কার্ট নিয়ে শর্ট ফ্লিমও তৈরি হচ্ছে। সেখানে মধ্যেবয়সস্ক নারীর বিপরীতে দেখানে হচ্ছে সদ্য কলেজ পড়ুয়া এক ছেলেকে। সেখানে দুটো বিষয়ই দেখানো হচ্ছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন বিষয়টা কতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। যতটুকু সাধারণ মানুষ না জানছে, ফ্লিম সেটা স্বভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সবস্তরের জনগনের কাছে পরিচিত করছে।

    সমাজের উচ্চবিত্ত ডিভোর্সী বিধবা নারীরাই এদেরকে শয্যাসঙ্গী হিশেবে বেছে নিচ্ছে। এর একটা কারণ বাংলাদেশে দৈনিক শতশত বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে অধিকাংশ নারীদের পক্ষ থেকেই। এদের অধিকাংশই শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী। এরা নিসঃঙ্গতার মুক্তির জন্য পুরুষ খুঁজে থাকেন। এসব নারীদের সংখ্যা যত বাড়ছে মেইল এস্কর্ট‍‍ সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ প্রবাসী স্বামীর শূন্যতায় এদেরকে বেছে নিচ্ছে। যাদিও এর শুরুর গল্পটা ভিন্ন। বিদেশ থেকে নানান কাজে যেসব নারীরা বাংলাদেশে আসেন, তারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থাকায় গাইডলাইন বা দৈহিক প্রয়োজন পূরণে অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুরুষ বেছে নেন।

    তাদেরকে সাথে ভাষাগত যোগাযোগের জন্য ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত আচরণ সম্পন্ন হতে হয়। এভাবে ধীরে ধীরে আভিজাত মহলে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। আর এভাবে যদি অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আমাদের সমাজের সব মহলে এর চাহিদার ব্যপকতা বৃদ্ধি পায় তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

    বৈবাহিক জীবনের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেলে একটা সমাজ ধ্বংস হতে সময় নেবে না। একটা সমাজ নষ্ট হয়ে গেলে একটা সভ্যতা সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটা আমাদের সকলের জানা৷ মানবজীবনে দাম্পত্য বন্ধন অপরিসীম। পরিবার একজন মানুষের পরিচয়, ভিত্তি। জৈবিক চাহিদার উপর ভিত্তি করেই একটা পরিবার গঠিত হয়৷ সুস্থ সুন্দর সমাজ পরিবারের উপর নির্ভর করে। আর পরিবার প্রথা ধ্বংস হয়ে গেলে সমাজও ধ্বংস হয়ে যায়।

    সমাজের নিম্নতর পেশা দেহবৃত্তি। সেটা নারী হোক বা পুরুষ হোক সবার জন্যই ঘৃণিত। পতিতাবৃত্তি তৈরি করে পারিবারিক জীবনর প্রতি অনীহা। এসব নারী পুরুষ আর কখনো সংসারী হয়ে ওঠে না। ফলে সমাজ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়। ধীরে ধীরে একটা দেশ রাষ্ট্র সমাজ হুমকির মুখে নিপতিত হয়, বিলুপ্তির পথ ধরে।

  • কিছু সম্পর্কে দূরত্ব কখনো ঘুচে না

    কিছু সম্পর্কে দূরত্ব কখনো ঘুচে না

    যে বালিকাটি আমাকে ভালোবাসতে চায় তার মাঝে আমার মাঝে সীমাবদ্ধতার দূরত্ব রয়েছে। যে দূরত্ব ভেঙে কাছে আসতে আমাদের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দেয়াল তৈরি হবে। আমাদের অনেক কথা জমা হয়ে আছে, ছোট টুকটুকে কিউট একটা মেয়ে ইশফা। কতবার চেয়েছি, যাই ওর সাথে বসে গল্প করি। তা আর হয় না। ওর মা নানা নানী কি মনে করবে ভেবে আর আগানো হয় না। আমারো ওকে নিজের ছোট ভাই-বোনের মতো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কি হত, হয়ত আমার একজন বোনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত! কিন্তু তা আর হয় না। মানুষ তখন প্রবাদ কপচাবে, মা’র চেয়ে মাসির দরদ বেশি! এই এক সমস্যা আমাদের সমাজে।

    সময়ে সময়ে ওর সাথে কিছু স্মৃতি তৈরি হয়েছে। যেগুলো আমাকে ওকে মনে রাখতে সহায়তা করে। এসব স্মৃতির পরিমান যে খুব দীর্ঘ তাও না। তাছাড়া ওর সাথে বেশি দেখা সাক্ষাৎও হয় না। আমার খালাবাড়ির পাশেই ওর নানাবাড়ি। বেড়াতে গেলে তখন দেখতে পাই। আমি আসছি এটা জানা মাত্রই দৌড়ে ছুটে চলে আসে, কেবল দেখার জন্য, ওর ইচ্ছে হয়, ভাইয়া বলে গলা জড়িয়ে ধরতে, পারে না, আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। ওর চোখে তখন নানান কথার পসরা সাজানো। মনে হয়, আমাকে না দেখার দিনগুলোতে সবকিছু ভেবে ভেবে রেখে দিয়েছে, দেখা হলে এটা বলবে, ওটা বলবে, হাসবে, কাঁদবে, অভিমান করবে। আমিও ওর হাসির সাথে হাসাবো। কাঁদলে বুকে জড়িয়ে ধরবো, সান্ত্বনা দিব, অভিমান করলে, তা ভেঙে দিবো, আরো বেশি করে ভালোবাসবো।

    এমন অনেক ভাবনার ভেতর দিয়ে আমাদের সময় কেটে যায়। দূরত্ব তবু ঘুচে না। মায়া বাড়ে, ভালোবাসা বাড়ে। কখনো বাড়িতে থাকতে মনে হয়, যাই কোন এক অজুহাতে খালাবাড়ি বেড়িয়ে এসে ওকে দেখা আসি। কখনো যাওয়াও হয়। কিন্তু সেই একই দূরত্ব, একই চোখের ভাষা দৃশ্যমান হয়, কখনো নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার চোখে কোন ভিজে উঠেছে, এখুনি বর্ষা নামবে খুব করে। আমি তখন আড়াল হই। চোখ মুছি। স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করি। ব্যস্ততায় লিপ্ত হই। ইশফা তখন সেই বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে থাকে। ওর খেলার সাথীদেরকে নিয়ে আসে খেলার জন্য। এ কেবল অজুহাত মাত্র। বাচ্চা মেয়েটাও অজুহাত বুঝে!

    কিছু ভালোবাসারা বোধহয় এমনি। দূরত্ব ঘুচায় না তাদের সম্পর্কের মধ্যে কখনো!

  • জীবন এক আশ্চর্য ঝাউপাতা

    জীবন এক আশ্চর্য ঝাউপাতা

    বিবর্ণ পাতার মতো একে একে সব স্বপ্ন ঝরে গেল। এ জীবন যেন বৃষ্টির পাতার মতোন। মনে ভেতর নিরুপদ্রব হাহাকার বয়ে চলছি কতদিন হয়। তুমি এলে না—ব্যর্থ প্রেমিকের মতো আমি সেই পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরিফিরি শূন্য হাতে। তোমার কোমল হাতটা নেই, নেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা লজ্জা মিশ্রিত হাসির রোল। তোমার দিকে চেয়ে থাকতে পারিনি কখনও একদৃষ্টে। এরমধ্যে কয়েকশো চোখের পলক পড়ে গেছে। বোকার মতো নির্বাক হয়ে দেখেছি তোমার মুখাবয়ব। দেখো, আমাদের কোনকিছুরই অন্ত নেই। কি অদ্ভুত ভাবেই মানিয়ে নিয়েছি জীবনের এত অদলবদল! মানিয়ে নিতে হয়, ব্যর্থ পুরুষ, ব্যর্থ মানুষেরা এভাবে পার করে দেয় তাদের অনাহুত জীবন।

    জীবনে এত দুঃখ আমি কখনো চাইনি। শূন্যতা। হাহাকার। কোনকিছুই না। একটা সাধারণ জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে। আমৃত্যু সেই স্বপ্ন টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম নিজের ভেতর—আমাদের সন্তান, সংসার সবই তো হয়েছিল তারপরও কেন এমন অব্যক্ত ব্যথা ফিরে এলো! আমরা কোথাও হেরে যাচ্ছি জীবনের কাছে, নিজের কাছে, পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও সমাজের কাছে। আমাদের এ বিপন্নতা, এ জন্মদাগ লেগে থাকবে বুকের ভেতর কালো দাগ হয়ে। পাশ ফিরলেই, একটু পিছু তাকালেই দেখতে পাবে আমাদের বিরহিয়া স্মৃতি।

    এভাবে সব এলোমেলো হয়ে যাক, আমরা দুই সমুদ্র তীরে নিজেদের নোঙর করি, এসব কিছুই ভাবনাতে আসেনি। আমাদের চোখজুড়ে অসীম স্বপ্ন ছিল। বন্ধু বলো, বান্ধবী বলো, প্রেমিকা বলো আর প্রিয়তম স্ত্রী, আমার সবই তুমি ছিলে। হ্যা, আমি একটা জিনিস পেরেছি—আমার দুঃখগুলোকে তোমার সাথে মিশিয়ে এক অদ্ভুত জীবনে রূপান্তরিত করতে।

    যাকে জীবনের সবকথা বলবো বলে ভালোবেসেছি। সে এখন শূন্যে ভেসে বেড়ায়। প্রিয়তমার মৃত্যু কতটা হৃদয়বিদারক হতে পারে এটা কেবল আমারি জানা, আর আমার প্রিয় সঙ্গী সময়। তোমার কবরের সাথে যদি আমাদের সমস্ত স্মৃতি কবর দিয়ে দিতে পারতাম! না, কিন্তু পারিনি। বেঈমানী করতে শিখিনি যে। ভালোবাসতেই শিখেছি কেবল। নিয়তির কাছে সবকিছু অসহায়। আমাদের গুচ্ছ গুচ্ছ ভাবনা আর মুঠো মুঠো বিষ্ময়কর স্বপ্নগুলো সবই হেমন্তের সকালে মৃদু শীতল বাতাসে ঝরে গেছে। কি একা হয়ে গেছি আমি তোমাকে হারিয়ে। নতুন জীবন কি শুরু করবো না-কি তোমার স্মৃতি বুকে, মস্তিষ্কে ধারণ করে আজন্ম বেঁচে থাকবো ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে!

    এই যে কোথায় যেনো থেমে যায় কোলাহল, কোন কিছুতেই মন নেই। কাকে যেন ভালোবেসেছিলাম, সেখানে ফিরে যাই, আমার অতীত আমাকে দুঃখী করে, স্মৃতি সবসময়ই দুঃখ নিয়ে হাজির হয়, এই তোমাকে সময়ের পরম্পরায় স্মরণ করছি, কেমন আছো!

    আমার সবকিছু আজকাল মিথ্যা মিথ্যা লাগে। সবাই যেন আমাকে মিথ্যা বলতেছে, আসলে আমাদের জীবনের কোন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই, যে পথ হাঁটলেই আমাদের আর কোন দুঃখ থাকবে না।

    জীবন এক আশ্চর্য ঝাউপাতা…

বিষয় নির্বাচন